সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

আমদানির অনুমতি পাওয়া ডিম এখনো আসেনি দেশে, বাজারে চড়া দাম

দেশে চাহিদার বিপরীতে ডিমের উৎপাদন বেশি। তারপরও সংকটের অজুহাতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে দাম। সমস্যা সমাধানে ১৫টি প্রতিষ্ঠান আমদানির অনুমতি পেলেও, ৪০ দিনেও সেই ডিম দেশে পৌঁছায়নি। এক্ষেত্রে পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, আমদানি নয়, দেশে উৎপাদিত ডিম দিয়েই চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে চাহিদার বিপরীতে ডিমের কোনো ঘাটতি নাই। কিন্তু তারপরও হু হু করে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে দাম। অভিযানসহ দাম বেঁধে দেয়ার পরও তার কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। ফলে নিম্নবিত্ত মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে ডিম। এতে ক্রেতাদের ক্ষোভের শেষ নেই। ডিমের চড়া দাম নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে এক ক্রেতা বলেন, ‘সরকার বাজারে ডিম বিক্রির জন্য যে দাম বেঁধে দিয়েছে, সেই দামে বাজারে ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টো বেশি দাম গুণতে হচ্ছে। ডিম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এটি আমাদের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ ডিমের দাম হাতের নাগালে না থাকার কথা উল্লেখ করে আরেকজন ক্রেতা বলেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতি পিস ডিমের খুচরা দাম ১২ টাকা বেঁধে দেয় সরকার। সেই হিসাবে প্রতি ডজনের মূল্য দাঁড়ায় ১৪৪ টাকা। কিন্তু বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়। কোথাও কোথাও হালিতে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা মোকামে ডিমের সংকটের কথা বলছেন। এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, ‘পাইকারি ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বেশি হওয়ার কারণে হিসেবে বলছেন যে, সরবরাহ কম। আমার প্রতিদিন ১০ হাজার লাল ডিম দরকার। কিন্তু আড়তে গেলে আমি প্রতিদিন ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার ডিম পাচ্ছি।’ বেঁধে দেয়া দামে ভোক্তার হাতে ডিম পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ার পর ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে তিন দফায় ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে গত ১৮ সেপ্টেম্বর দেশের বাজারে ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় তা সামাল দিতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেয় সরকার। সে সময়ে ৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি করে ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। সেই চারটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে: মেসার্স মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্স, টাইগার ট্রেডিং এবং অর্নব ট্রেডিং লিমিটেড। পরে ২১ সেপ্টেম্বর আরও ৬ কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: চিজ গ্যালারি, পপুলার ট্রেড সিন্ডিকেট, মেসার্স রিপা এন্টারপ্রাইজ, এস এম করপোরেশন, বিডিএস করপোরেশন ও মেসার্স জয়নুর ট্রেডার্স। পরে ৮ অক্টোবর আরও ৫ প্রতিষ্ঠানকে ৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। আমদানির অনুমতি পাওয়া পাঁচ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে: মেসার্স লাকি এন্টারপ্রাইজ, ইউনিয়ন ভেনচার লিমিটেড, জে এফ জে প্যারাডাইজ কানেকশন, মেসার্স পিংকি ট্রেডার্স এবং লায়েক এন্টারপ্রাইজ। ফলে সব মিলিয়ে মোট ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমদানির অনুমতির ৪০ দিন পেরুলেও সেই ডিম এখনও দেশে পৌঁছায়নি। নানা জটিলতায় আনতে দেরি হচ্ছে বলে অজুহাত তাদের। এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত কী পরিমাণ ডিম আসবে আর দাম কতটা কমবে- তা নিয়ে ধোঁয়াশাই রয়ে গেছে। এদিকে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার দাবি, আমদানি নয়, বরং দেশে উৎপাদিত ডিম দিয়েই চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দাম নিয়ন্ত্রণে সম্ভব। তিনি বলেন, তবে ব্যবসায়ীদের মূল্যবোধের অভাবে শুধু অভিযান চালিয়ে কাজ হচ্ছে না বলে উল্লেখ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ডিমের চাহিদা ছিল প্রতি পিস ১ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। বিপরীতে উৎপাদন হয় ২ হাজার ৩৩৮ কোটি পিস। বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন বলছে, দেশে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা ৪ কোটি পিস। আর উৎপাদন হচ্ছে ৫ কোটি।

Post a Comment

0 Comments